রোমাঞ্চ ছড়িয়ে প্রথম ১১ মিনিটেই হলো ৩ গোল। তবে নির্ধারিত সময় ২-২ সমতায় শেষ করলো দুই দল। টান টান উত্তেজনার ম্যাচটি অতিরিক্ত সময়েও নিষ্পত্তি হলো না। টাইব্রেকারের নির্ধারিত পাঁচ শটেও কোনও দল জিততে পারেনি! শেষ পর্যন্ত সাডেন ডেথের সপ্তম শটে এসে ভাগ্যদেবী মুখ ফিরে তাকালো সাইফ স্পোর্টিয়ের দিকে, আর হতাশায় ডুবলো মোহামেডান।
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দলকে টাইব্রেকারে ৭-৬ গোলে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে সাইফ। আগামী ৬ জানুয়ারি সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ মারুফুল হকের চট্টগ্রাম আবাহনী।
সাডেন ডেথে উজবেকিস্তানের সিরোজউদ্দিন রাখমাতুলোয়েভের শেষ শটটি জালে জড়াতেই উৎসবে মাতে সাইফ। রহিম উদ্দিন ও রহমত মিয়াও সাডেন ডেথে গোল পেয়েছেন। এর আগে টাইব্রেকারে যদিও তাদের ইকেচুকু কেনেথ, শাহেদুল আলম, জন ওকোলি ও ইমানুয়েল আরিয়াচুকু লক্ষ্যভেদ করেন। তবে তরুণ ইয়াসিন আরাফাত গোল করতে ব্যর্থ হন।
অন্যদিকে মোহামেডানের মনজির কোলিয়াদিতি ও আমির হাকিম সাডেন ডেথে গোল করলেও পারেননি আতিকুজ্জামান। আর টাইব্রেকারে সোলেমানে দিয়াবাতে, উরু নাগাতা, হাবিবুর রহমান সোহাগ ও মোহাম্মদ মিঠু বল জালে জড়ান। শুধু আমিনুর রহমান সজীবের শট গোলকিপার ফিরিয়ে দেন।
এর আগে অতিরিক্ত সময়ে ছিল সাইফের প্রাধান্য। তবে কোনও গোল হয়নি। ১০৯ মিনিটে সাইফের রহিম উদ্দিন গোলকিপারকে একা পেয়ে তার বরাবর শট মেরে লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। ১১৩ মিনিটে জন ওকোলির শট এক ডিফেন্ডার গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন।
নির্ধারিত সময়ের শুরু থেকে উপভোগ্য লড়াই হয়েছে। দুদলই আক্রমণ-প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবল উপহার দিয়েছে। প্রথম ১১ মিনিটের মধ্যেই তো ৪ গোল হতে পারতো! তবে চারটি না হলেও ৪ গোল দেখেছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আসা বেশকিছু দর্শক।
ম্যাচের ১৬ সেকেন্ডে মোহামেডানের ফরহাদ মনার শট এক ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করে দলকে বাঁচান। কিন্তু ৫৪ সেকেন্ডেই প্রথম গোল দেখতে পায় মোহামেডান। হাবিবুর রহমান সোহাগের কর্নার থেকে বুরকিনা ফাসোর মনজির কোলিদিয়াতির মাথা ছুঁয়ে আসা বলে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন আতিকুজ্জামান।
এক গোলে পিছিয়ে থেকে সাইফও ঝড়ের বেগে আক্রমণে ওঠে। সপ্তম মিনিটে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের কর্নার থেকে ফাঁকায় থাকা নাইজেরিয়ান ইমানুয়েল আরিওচুকু টোকায় ১-১ করেন।
৪ মিনিট পর তারা ২-১ গোলে এগিয়ে যায়। তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল পেয়ে নাইজেরিয়ান ইকেচুকু কেনেথ গোলকিপার আহসান হাবিব বিপুকে পরাস্ত করেন। ১৯ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে মোহামেডানের রক্ষণ কাঁপিয়ে দিয়েছিল সাইফ। কিন্তু ওকোলি-ফাহিম-আরিফুরদের প্রচেষ্টা বৃথা যায়। এর মধ্যে আরিফুরের হেড তো ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে।
বিরতিতে যাওয়ার ঠিক দুই মিনিট আগে মোহামেডান খেলায় ফিরে আসে। সাইফ থেকে এবার মোহামেডানে এসেছেন জাফর ইকবাল। তার নেওয়া জোরালো শটটি গোলকিপার পাপ্পু হোসেন ফিস্ট করে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান। কিন্তু পরবর্তীতে কর্নারের শট আর ফেরাতে পারেননি। শাহেদের কর্নারে মালির সোলেমান দিয়াবাতের হেড জালে জড়ালে স্কোরলাইন হয় ২-২।
বিরতির পরও দুই দলের লড়াই অব্যাহত ছিল। তবে সাইফ আক্রমণে এগিয়ে ছিল। ৬২ মিনিটে ইকেচুকু কেনেথের শট গোলকিপার বিপু ফিরিয়ে দিয়ে সাইফকে এগিয়ে যেতে দেননি। চার মিনিট পর সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে মোহামেডান গোল করতে পারেনি।
৯০ মিনিটে ওকোলির শট গোলকিপারের পায়ে লেগে ফিরে এলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এই সময়েও কোনও দল গোল করতে না পারলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। ফল নিষ্পত্তির স্পষ্ট কিক চলতেই থাকে। অবশেষে সাডেন ডেথে গিয়ে জয়ের হাসি হাসে সাইফ।
আগামীকাল (রবিবার) তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে লড়বে বসুন্ধরা কিংস-শেখ জামাল ধানমন্ডি। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বিকেল ৪টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
Leave a Reply