সাতক্ষীরা জেলখানার জেলার হাসনা জাহান বিথী কর্তৃক কর্তব্যরত অসুস্থ কারারক্ষী হাসিবুর রহমানের সাথে অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। ওই কারাক্ষী ও তার পরিবারের সদস্যরা এ অভিযোগ করেন। তবে, এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলার নিজেই।
কারারক্ষী হাসিবুর রহমান (যার কারারক্ষী নং-৪২৪৮০) কাঁদতে কাঁদতে তার উপর যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, কর্তব্যরত অবস্থায় হার্টের সমস্যা নিয়ে তিনি গতকাল শনিবার (৬ জুলাই) কারা হাসপাতালে যান। এরপর সেখান থেকে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু সদর হাসপাতালে নেয়ার আগে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে আনার জন্য গেলে তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন জেলার হাসনা জাহান বিথী। এমনকি সরকারী গাড়িটি পর্যন্ত দিয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা তাকে ভ্যানযোগে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর সদর হাসপাতাল থেকে ইজিবাইক যোগে তাকে মেডিকেলে পাঠানো হয়।
অসহায় এই কারারক্ষীর বড় ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ুয়া নিহাল শেখ তার বাবাকে বাঁচাতে স্ট্রেচারে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যায় সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছে। এ সময় তার অশ্রু দুনয়নে শুধু বাবাকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপন লড়াই করতে দেখা যায়। সে দুঃখ ভরাক্রান্তমনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য জেলখানার প্রধান কর্তকর্তা তাদের সরকারি গাড়িটা পর্যন্ত দেয়নি। এমনকি আমাদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছেন তিনি।’
এসময় সে আরও বলেন, ‘আমার বাবা আজ মারা গেলে কোথায় পেতাম আমার বাবাকে ?’
একই কথা বলেন কারারক্ষী হাসিবুরের স্ত্রী বৃষ্টি আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা আমার স্বামীর অসুস্থ্যতার খবর শুনে কারাফটকে গেলে আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে বের করে দেয়া হয়। এমনকি তার স্বামীর সারাদিনে কোন খোঁজ খবর পর্যন্ত নেননি জেলার।’
কারারক্ষী হাসিবুরের ভাই সজিব শেখ বলেন, আমার ভাইয়ের অসুস্থতার খবর শুনে সেখানে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি জেলার আমার ভাইকে অপদার্থ, কুলাঙ্গারসহ বিভিন্ন খারাপ ভাষায় গালি দিচ্ছে। তিনি বলছেন, তুই এতো দেনা দায় হয়েছিস কেন ? এমনকি বাবা মাকে নিয়েও খারাপ কথা বলেন। একপর্যায়ে সাসপেন্ড করানো ও চাকুরী খাওয়ার ভয় দেখান।
তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাতক্ষীরা কারাগারের জেলার হাসনা জাহান বিথী জানান, হাসিবুর তাদের মাধ্যমে হাসপাতালে গিয়েছেন। তবে, যারা বাসা নিয়ে থাকেন তারা নিজেরা ডাক্তার দেখান। অসুস্থ অবস্থায় তাকে সরকারি গাড়িযোগে হাসপাতালে কেন পাঠানো হয়নি প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, হাসিবুর আপনার কি হয় ? কে বলেছে আপনাকে ? অপনি কি উনার ব্যাকগ্রাউন্ড জানেন ? আমরা উনাকে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি। আপনি যদি প্রমান চান তাহলে অফিসে আসেন। উনার স্ত্রী যখন অসুস্থ ছিল তখন উনার স্ত্রীকে আমি কিন্তু রক্ত দিয়েছিলাম।
তাহলে আজকে কি হলো মানবিক দিক দিয়ে হলেও তাকে তো আজ উপকার করা উচিত ছিল, এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, আজকেও তাকে হেল্প করেছি।
তবে, তার পরিবারের লোকজনের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি খারাপ ব্যবহার করেছি তারা আপনাকে বলছে ? আচ্ছা ঠিক আছে। আমি খারাপ ব্যবহার করছি আমি কি সেটা বলবো ? আমি কিভাবে বললে আপনি বুঝবেন আমি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করছি। আজ পর্যন্ত আমি আমার কোন স্টাফের সাথে খারাপ ব্যবহার করছি তা তারা কেউ বলেনি। সুযোগ সুবিধা হাবিজাবি পেতো তা তো তিনি আপনাকে বলেনি। সে যখন আপনাকে বলেছে সেই জানে আমি তার সাথে কি রকম খারাপ ব্যবহার করেছি।
Leave a Reply