সাতক্ষীরার কাটিয়া লস্করপাড়া এলাকার ভূয়া চিকিৎসক প্রতারক ওমর ফারুক, জাহিদুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলামের ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছে শতশত পরিবার। এই তিন সহদরের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
একই জমি পিতা ও পুত্রের নামে দেখিয়ে প্রতারণা করে কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন তারা। ভিক্ষুক থেকে শুরু করে চায়ের দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার শতাধিক মানুষ তাদের প্রতারণার স্বীকার হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, ফাস্ট মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের নামে ডিপোজিট ও ডিপিএস’র নামে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ২০০ গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ২০১৪ সালে হঠাৎ প্রতিষ্ঠানটি লাপাত্তা হয়ে যায়।
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ডা. ওমর ফারুক বিক্ষুব্ধ গ্রাহকের নজরে আসলে গ্রাহকরা তাকে গণধোলাই দিতে গেলে সে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সেবারের মত রক্ষা পায়। কিন্তু গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া তো দূরের কথা উল্টো গ্রাহকদের নামে আদালতে মামলা করে সে। যার নং-৮২৫/১৬ (৭)।
এ মামলায় ডা. ওমর ফারুক ১৯/০১/২০২০ তারিখে আদালতে হাজির হলে তার বিরুদ্ধে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও গ্রাহকদের সমুদয় টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।
এসময় প্রতারক ম্যানেজার আদালতের কাঠগড়া থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। আদালত তার বিরুদ্ধে সি.আর -৬৪০/১৬ (৭) ও ফৌজদারী কার্যবিধির ৭৫ ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এরপর থেকে আজ অবধি সে পলাতক আছে।
ফাস্ট মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের ম্যানেজার ডা. ওমর ফারুকের ভাই মো. জাহিদুল ইসলাম বাবলু কাটিয়া লস্করপাড়া এলাকার হারান উল্লাহ মোড়লের ছেলে আফসার আলী মোড়লের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে তার পৈত্রিক ভিটা বাড়ির দলিল সোনালী ব্যাংকে বন্ধক রেখে ৪ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করে।
ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় অত্র ঋণের জামিনদার আফসার আলী মোড়ল ঐ প্রতারকের খপ্পরে পড়ে ঋণ খেলাপী হয়ে যায়। ঋণের টাকা না দেওয়ায় ভিটা বাড়ি নিলামে গেলে সে সর্বশান্ত হয়ে পড়ে।
এছাড়াও মুনজিতপুর এলাকার মাদ্রাসা শিক্ষক মুহিবুল্লাহর নিকট থেকে ১৪ লক্ষ নিয়ে টাকা ফেরত না দেওয়ায় সেই মানুষটি প্রায় পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
সাতক্ষীরার কাটিয়া লস্করপাড়া এলাকার মো. সামছুর রহমানের ছেলে প্রতারক তিন সহদর ওমর ফারুক, জাহিদুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে ভিআইপি ক্লথ ষ্টোর, ঝিলিক এন্টারপ্রাইজ, যশোর লিবার্টি নামক প্রতিষ্ঠানের নাম করে ব্যাংক ও এনজিওসহ শত-শত লোকের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এছাড়া জাহিদুল ইসলাম সাতক্ষীরা ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে পরিশোধ করতে না পারায় ফৌজদারী কার্যবিধির সি,আর-১২৯৫/০৭ (সাত) আদালতে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আর এক সহদর প্রতারক শহিদুল ইসলাম উত্তর কাটিয়া এলাকার রহিমা বেগমের নিকট থেকে ৬ লক্ষ টাকা নিয়ে ৮/১০ বছর টাকা না দিলে আদালতে সিআর ৪৭৮/১৬ নং মামলা হলে শহিদুলের বিরুদ্ধে আদালত ১২ লক্ষ টাকার ডিগ্রি ও ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে।
এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। বর্তমানে সে জেল হাজতে আছে।
এই তিন সহদর প্রতারক থেকে আর যেন কোন মানুষ সর্বশান্ত না হয় সেজন্য সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগীরা
Leave a Reply