দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেছেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার, এনজিও, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকলের সমন্বিত ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলসহ বহুমাত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, তেমনি সংসদও বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করছে। যে কোনো মূল্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সকলের অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া জরুরি।
কমিশনার শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিষয়ক এক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
আমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা এবং উত্তম চর্চার বিকাশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের যেভাবে আত্মনিয়োগ করার কথা ছিল, কতিপয় শিক্ষক সেভাবে দায়িত্বপালন করছেন না। এ পর্যন্ত দুদক ১৩০ টিরও অধিক গণশুনানি করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে শতাধিক বিদ্যালয় ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী উপস্থিত রয়েছে কিন্ত কতিপয় শ্রেণি শিক্ষক আসেননি। তিনি হয়তো কোচিং বা অন্য কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। বিষয়গুলো স্থানীয় শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
কোচিং বাণিজ্য নিয়ে কমিশন থেকে কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিবাবক, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, একদিন এক হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসকের চেয়ারে একজন কম্পাউন্ডারকে বসে থাকতে দেখা গেছে। সংশ্ল্ষ্টি চিকিৎসক হাসপাতালে আসেননি, কম্পাউন্ডার চিকিৎসক সেজে চিকিৎসকের চেয়ারে বসে আছেন। প্রথমে আমিও বুঝতে পারিনি। পরে কথা-বার্তা কিছু বলার পরে বুঝতে পারলাম উনি চিকিৎসক নন। বিষয়টি সিভিল সার্জনকে জাননো হয়েছে, তিনি হয়তো প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নিয়েছেন।
তিনি বলেন, গণশুনানিতে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ জিআর, টিআর, টাকিখা ও কাবিখার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেন। অনেকেই বলেন এগুলোর সঠিক ব্যবহার হলে গ্রামের চেয়ারা দৃশ্যমান পরিবর্তন হতো।
তিনি বলেন, ওভার-ইনভয়েসিং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং ও রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে ব্যবসায়ী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদক-কে সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করা সমীচীন। কারণ কমিশনে এ সংক্রান্ত অনেক অভিযোগ আসে। এ বিষয়ে বেশকিছু মামলাও করা হয়েছে। এ জাতীয় ঘটনা ঘটার আগেই প্রতিরোধের জন্যই সমন্বয়ের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে এসিল্যান্ড অফিস, ভূমি অধিগ্রহণ অফিস ও সেটেলমেন্ট অফিসসমূহের প্রতি মানুষের একসময় আস্থা ছিল। এখন অফিসগুলোর প্রতি তৃণমূলের মানুষের ব্যপক হতাশ।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, শুদ্ধাচার বিকাশে সরকার তথ্য অধিকার আইন, জণ-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা) আইন, মানিলন্ডারিং আইনসহ বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছে, পাশাপাশি সরকারি পরিষেবা তৃণমূল জনগণের নিকট পৌঁছে দেওয়ার জন্য তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও আইসিটি) এ কে এম সোহেল, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব সাদিয়া আফরিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। কমিশনের উপপরিচালক ও পরিচালক পদমর্যাদার ৭০ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করছেন।
Leave a Reply