দশম শ্রেনীর ছাত্রী সুমি। বয়স তখন ১৪ বছর মাত্র। কিন্তু দিনমজুর বাবার চিন্তার শেষ নেই। সুমিকে বিয়ে দিতে হবে। মেধাবী ছাত্রী সুমি। তার ইচ্ছা বিয়ে নয় এখন। সে আরোও লেখাপড়া করতে চায়। কিন্তু কোন ভাবে বিয়ে ঠেকানো গেলো না তার। হবু জামাই কৃষি জমিতে কাজ করে। সুখের সংসার। বছর না ঘুড়তেই সুমি কন্যা সন্তানের জননী। পরের বছর জন্ম দেয় পুত্র সন্তান। কিছু দিন যেতেই ভাঙ্গতে থাকে সুমির স্বাস্থ্য। এক সময় ভেঙে যায় তার স্বপ্নের ঘর। তার স্বামী প্রায় সময় শারিরীক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করতো তাকে। পাশাপাশি সংসার ও তার বাচ্চার প্রতি ছিল উদাসিন। সংসার খরচ, ভরণপোষণও প্রায় বন্ধ। খোঁজ খবরও নেন না তাদের। হঠাত একদিন খবর আসে তা স্বামী অন্যত্র আরেকটি বিবাহ করেছেন।
সুমির স্বপ্নের আকাশ যেন ভেঙ্গে পড়ে। চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে থাকে। ছেলে মেয়ে নিয়ে সে কোথায় যাবে, কি খাবে? নিরুপায় হয়ে সাহায্যের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুড়তে থাকে সে। তার এক প্রতিবেশির মাধ্যমে সে খবর পায় উত্তরণ সীমান্ত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিভিন্ন ট্রেডের প্রশিক্ষণের বিষয়ে। সে জানতে পারে পিকেএসএফ’র এসইআইপি প্রকল্পের আওতায় ট্রেনিং এর পাশাপাশি থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকে হাতে কলমে কারিগরি শিক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। এ খবর পেয়ে সুমি যেন জীবন ফিরে পায়, ফিরে পায় স্বপ্ন দেখার সাহস।
এরপর সে উত্তরণ সীমান্ত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ট্রান্স-২, ব্যাচ-৭ এর স্যুইং মেশিন অপারেশন ট্রেডে ভর্তি হয়। তিন মাসের প্রশিক্ষণে সে দক্ষ কারিগর হয়ে ওঠে। কোর্স শেষে প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষকদের সহযোগীতা ও পরামর্শে পারুলিয়াতে নিজ বাড়ির কাছে “সুমি টেইলার্স’’ নামের টেইলারিং ব্যবসা শুরু করে। ব্যবসা শুরুর মাসে কাজ করে সে প্রায় ছয় হাজার টাকা আয় করে। সেই সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্ডার নিয়ে কাজও সে কাজ শুরু করে। ব্যবসার পুঁজি বাড়াতে উত্তরণ মাইক্রো ফাইনান্স প্রোগ্রাম থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে নারীদের থ্রীপিস ও সিট কাপড় ওঠায় তার দোকানে। এভাবে ব্যবসা শুরু করে সে এখন একজন দক্ষ স্বাবলম্বী ও ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেছে। বর্তমানে সুমীর মাসিক আয় ২০ হাজারের কাছাকাছি। এখন আর সুমিকে মানুষের কাছে হাত পাততে হয় না।
Leave a Reply