চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে সাতক্ষীরার শ্যমনগর উপজেলার ১২নং গাবুরা ইউনিয়নের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের কার্যক্রম একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিক্যাল অফিসার না থাকায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম। এতে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের নেওয়া মহৎ প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে।

এদিকে চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারী না থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গবাদী পশু পালনে ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। এতে প্রত্যন্ত এলাকার বিপন্ন রোগীরা চিকিৎসা নিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গেলেও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের। এই অবস্থায় উপজেলা সদরের প্রাইভেট হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসতে বাধ্য হচ্ছে বিপন্ন মানুষগুলো।
গাবুরা ইউনিয়ানের যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুব খরাপ হওয়ায় এখানকার কোন মুমূর্ষ রোগীকে শহরে নিতে-নিতেই সে মারা যায়। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত গাবুরা ইউনিয়নের জনগণ। মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রায় একযুগ আগে এখানে স্থাপন করা হয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কেন্দ্রটি।
প্রতিটি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে একজন করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, উপসহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ফার্মাসিস্ট, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা, পিয়ন ও আয়া থাকার কথা। কিন্তু ইউনিয়নের একটি মাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নেই।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলম জানান, এখানে একজন করে উপ-সহকারি মেডিক্যাল অফিসার, প্যারামেডিক্যাল এবং ভিজিটর দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকলেও এদের কেউই এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেননি।
তিনি হতাশার সুরে বলেন, দোতলা বিশিষ্ট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে নানা সুযোগ-সুবিধাদি থাকার পরও দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা এখানে না আসায় ভবনটিও দিন-দিন হতশ্রী হয়ে পড়ছে। বাইরের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ থাকায় এর সামনে স্থানীয় লোকজন গবাদীপশু পালন করা শুরু করেছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, গাবুরা ইউনিয়নের প্রায় ৪৭ হাজার মানুষের দোরগোড়ায় উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছিল। প্রথমদিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে প্রতিদিন বহু মানুষ চিকিৎসা নিতে ভিড় করতো। কিন্তু প্রতিষ্ঠার কয়েকবছর যেতে না যেতেই এতিমের মতো হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। এ কারণে সাধারণ মানুষকে জরুরি চিকিৎসা সেবা পেতে হলে দীর্ঘ কপোতাক্ষ ও খোলপাটুয়া নদীপথ বা কাঁদাপথ পেরিয়ে উপজেলা সদরে যেতে হয়। এই পরিস্থিতিতে মাঝপথেও অনেক বিপন্ন রোগী তাৎক্ষণিক চিকিৎসার অভাবে মারা পড়েন। এনিয়ে জেলা ও উপজেলার স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
তিনি আরো বলেন, আমরা অতিদ্রুত গাবুরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির কার্যক্রম পুনরায় চালু দেখতে চাই। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন চাই।
গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. অতিয়ার রহমান বলেন, শুরু থেকেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ। এখন তো স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির জানালা দরজাও নষ্ট হয়ে গেছে। ভবন সংস্কারও জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা আক্ষেপ করে বলেন, বিগত জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সুন্দরবন সংলগ্ন প্রত্যান্ত এলাকার মানুষের জন্য একটি এম্বুলেন্স বোট দেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখনো আমরা তা পায়নি।
এ ব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পকনা কর্মকর্তা শাকির হোসেন বলেন, সপ্তাহে দুদিন গাবুরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি খোলা হয়। জনবল সংকটের করণে নিয়মিত খোলা সম্ভব হয়না। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা শুধু লিখতে পারি। আমরা আমাদের উপরের কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রওশন আরা জামান এর কাছে জানতে চাইলে তিনিও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পকনা কর্মকর্তার সুরে বলেন, জনবল সঙ্কটের কারণে ওখানে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। আমরা উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। জনবল নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত আমরা কিছুই করতে পারবো না।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply