হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে নদী হত্যা করে মাছ চাষ!

আমির হোসেন খান চৌধুরী
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
  • ২৪৯
এভাবেই নদী দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা সদরের বিনেরপোতা শালিখা (দলুয়া) নদী দখল করে নেটপাটা ও বেড়ীবাধ দিয়ে মৎস্য চাষ করছে একটি প্রভাবশালী মহল। বিনেরপোতা নদীর সম্মুখ হতে কয়েক কিলোমিটার নদী খণ্ড-খণ্ড করে দখল করে একাধিক ব্যক্তির কাছে অবৈধভাবে বরাদ্দ দিয়ে একটি প্রবাহমান নদীকে তিলে তিলে হত্যা করা হয়েছে।

কোথাও খাল কোথাও ড্রেন আবার কোথাও ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো মনে হলেও আসলে এটি এক সময়ের প্রমত্তা শালিখা নদী (বিনেরপোতায় বেতনার সাথে সংযুক্ত ছিল)। বিনেরপোতা গোপীনাথপুর এলাকার কয়েক কিলোমিটার এলাকায় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি আরো প্রভাবশালী একজনের কাছ থেকে এগুলো ইজারা নিয়েছেন! যদিও সরকারি হিসেবে এটি ইজারা দেয়া নেই। এছাড়া নদীর পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় বেশ কয়েকজন ভূমিদস্যু পজেশন বিক্রি করেছেন। যেখানে ইতিমধ্যে কয়েকটি পাকা বাড়িও তৈরী হয়ে গেছে।

নেট-পাটা দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয়েছে নদীর গতিপথ।

সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে এলাকাবাসী জানান, নগরঘাটার সৌরভ, বিনেরপোতার গফুর, নুরুলসহ কয়েকজন ব্যক্তি নদীর কয়েক কিলোমিটার অবৈধভাবে দখল করেছেন। তবে এটি মূলত দখল করেছে অত্র এলাকার চিহ্নিত চোর-ডাকাতদের মদদদাতা জিয়া।

জিয়া ওই নদী দখল করে অন্যান্যদের কাছে অর্থের বিনিময়ে খণ্ড-খণ্ড করে অবৈধভাবে বরাদ্দ দিয়েছেন বলে এলাকাবাসী দাবি করেন।

এভাবে নদীর অংশ দখল করে মৎস্য চাষ করায় হাজার-হাজার বিঘা জমির পানি নিস্কাশন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে এবং সদর উপজেলার লাবসা ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা সামান্য বৃষ্টিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়ছে। কিন্তু জিয়া প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরোধীতা করার সাহস নেই কারো।

স্থানীয়রা আরো জানান, জিয়া একসময়ে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। ভোলপাল্টে এখন সে আওয়ামী লীগার হয়েছেন। তিনি অত্র এলাকার চিহ্নিত চোর-ডাকাতদের নিয়ন্ত্রণ করে। রাতে তার ডেরায় বসে মাদকের আসর। তার রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ বাহিনী। ইতোপূর্বে তুচ্ছ ঘটনায় প্রবীন ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা সাবান আলী ও তার সন্তানদের কুপিয়ে হত্যার চেষ্টাও করেছিলো জিয়া এবং তার বাহিনী। এঘটনায় আদালতে একটি মামলাও চলমান রয়েছে।

স্থানীয়দের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর বরাবর গণস্বাক্ষর করে এই নদী উন্মুক্ত করার জন্য দরখাস্ত দেয়া হলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি। বরং অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই এই দখলদারিত্ব চলে আসছে।

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কতিপয় ভূমিদস্যু যে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে নির্বিঘ্নে নদীটিকে তিলে তিলে হত্যা করছে তাদের উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে এখনও কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না?

‘নদী হত্যা’ শব্দটি সচেতনভাবে ব্যবহারের কারণ, দেশের সর্বোচ্চ আদালত নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এই নদীর হত্যাকারীদের এবং তাদের সহযোগীদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এদিকে জিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নদীর দুই মাথা বন্ধ থাকায় এলাকার গরিব মানুষগুলো খন্ড খন্ড করে মাছ চাষ করে। এছাড়া বাধ কেটে দিলে উল্টো নদীর পানি এদিকে প্রবেশ করবে। তাই ফেলে না রেখে মাছ চাষ করা হচ্ছে।

সরজমিনে শালিখা (দলুয়া) নদীর বর্তমান অবস্থা পরিদর্শণে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরার নেতৃবৃন্দ।

অন্যদিকে বিনেরপোতা এলাকার কিছু সচেতন মহলের আহ্বনে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ সাতক্ষীরার সভাপতি এড. ফাহিমুল হক কিসলু, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম, প্রচার সম্পাদক আমির হোসেন খান চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক এম.বেলাল হোসাইনসহ নাগরিক নেতৃবৃন্দ উক্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।

এবিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশিষ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT