হয় লজ্জা না হয় ইতিহাস!

ক্রীড়া ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
  • ১৮৯

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২০৫ রানে অলআউট হওয়ায় পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করছে আফগানিস্তান। আলোর স্বল্পতার কারণে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হয়ে গেছে আগেভাগেই। ওই পর্যন্ত আফগানরা ৮৩.৪ ওভারে ৮ উইকেটে করেছে ২৩৭ রান। তাতে লিড নিয়েছে ৩৭৪ রানের, হাতে আছে ২ উইকেট।

বাংলাদেশের সামনে তাই অপেক্ষা করছে কঠিন পরীক্ষা। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা সবসময়ই কঠিন। তাছাড়া প্রথম ইনিংসে আফগান স্পিনাররা পিচ থেকে যে রকম সুবিধা পেয়েছেন, তাতে অসম্ভব কিছুই করে দেখাতে হবে স্বাগতিকদের। শুধু অসম্ভব কিছু নয় সাথে ইতিহাসও নতুন করে লিখতে হবে টাইগারদের। কারণ যে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টাইগাররা টেষ্ট খেলছে এ মাঠে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৩১ রান তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ। এ মাঠে এটি যেকোনো দলের চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সে টেস্টে ৫১৩ রান তাড়া করতে নেমে হেরেছিল বাংলাদেশ। আর এ মাঠে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩১৭ রান তাড়া করে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। অর্থাৎ আফগানস্থানের সাথে এই টেষ্টে বাংলাদেশকে হয় হারের লজ্জা পেতে হবে না হয় ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে।

শনিবার তৃতীয় দিনে আলো কম থাকায় বিকেল ৪টা থেকেই জ্বলেছে ফ্লাডলাইটের আলো। কিন্তু দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগের ওভারে ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ হলে ফ্লাডলাইটের আলো নিভে যায়। ২ মিনিটের ব্যবধানে জেনারেটর চালু হলেও ততক্ষণে খেলা শেষের ঘোষণা দিয়েছেন আম্পায়াররা। এজন্য আগামীকাল (চতুর্থ দিন) ম্যাচ শুরু হবে নির্ধারিত সময়ের ২০ মিনিট আগে, সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে।

প্রথম ইনিংসে মাত্র ২০৫ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। বল হাতে নেওয়া সাকিব আল হাসান প্রথম ওভারেই তুলে নেন ২ উইকেট। কিন্তু ইব্রাহিম জাদরান (৮৭) ও আসগর আফগানের (৫০) হাফসেঞ্চুরিতে বড় লিড পেয়েছে সফরকারীরা। কার্যকরী ভূমিকা রেখেছেন ৩৪ রানে অপরাজিত থাকা আফসার জাজাই। তার সঙ্গে চতুর্থ দিন শুরু করবেন ইয়ামিন আহমদজাই (০*)।

প্রথম ইনিংস শেষে ১৩৭ রানে পিছিয়ে থাকায় বাংলাদেশের শুরুতে দারুণ বোলিংয়ের প্রয়োজন ছিল। সেটা পূরণে সাকিবই শুরু করেন বোলিং। প্রথম ওভারেই করেন বাজিমাত। টানা দুই বলে উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন তিনি।

আফগানদের দ্বিতীয় ইনিংসের তৃতীয় বলে এলবিডাব্লিউ করে সাকিব ফেরান ইহসানউল্লাহকে (৪)। পরের বলে আবারও উইকেট বাংলাদেশ অধিনায়কের। এবার তার শিকার প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান রহমত শাহ। নিজের মুখোমুখি প্রথম বলে সাকিবের কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন এই ব্যাটসম্যান।

সাকিবের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছিল আফগানিস্তান। তবে প্রতিরোধ টিকেনি নাঈম হাসানের আঘাতে। ‍এই স্পিনারের বলে ফেরেন হাশমতউল্লাহ শহীদি। নাঈমের বলে দারুণ ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। এই স্পিনারের বাঁক নেওয়া ডেলিভারি হাশমতউল্লাহর ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের পায়ে লেগে আশ্রয় নেয় সৌম্যর হাতে। এই আফগান ব্যাটসম্যান ৩৭ বলে করেছেন ১২ রান।

যদিও ইব্রাহিম জাদরান ও আসগর আফগানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা। অনেক প্রচেষ্টার পর তাদের প্রতিরোধের দেয়াল ভেঙে স্বস্তি ফেরান তাইজুল ইসলাম। লাঞ্চের পর ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটি ভেঙেছেন তিনি আসগরকে সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে। হাফসেঞ্চুরি করা এই ব্যাটসম্যানের বিদায়ে ভাঙে ইব্রাহিমের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে গড়া ১০৮ রানের জুটি। আসগর তার ৫০ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৪ বাউন্ডারি ও ২ ‍ছক্কায়।

ইব্রাহিম অবশ্য হাফসেঞ্চুরি করে সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন। প্রথম ইনিংসে আফগানিস্তানের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে রেকর্ডের খাতায় নাম তুলেছেন রহমত শাহ। দেশটির দ্বিতীয় সেঞ্চুরিয়ান দেখারও জোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পারেননি ইব্রাহিম। ৮৭ রানে তিনি আউট হয়ে গেছেন নাঈম হাসানের বলে। চট্টগ্রামের ম্যাচ দিয়েই টেস্ট অভিষেক হওয়া ইব্রাহিম ২০৮ বলের ঝলমলে ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৬ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায়।

দিনকয়েক আগে টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়া মোহাম্মদ নবী খেলে ফেললেন টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংস। যদিও শেষটা ভালো হয়নি, মাত্র ৮ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে মুমিনুল হককে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন তিনি।

তার বিদায়ের পর ব্যাটে ঝড় তুলেছিলেন রশিদ খান। ক্রিজে এসেছিলেন সম্ভবত আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা নিয়েই। রশিদ পরিকল্পনা বাস্তবায়নও করেন নাঈম হাসানের এক ওভারে ৫ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। আক্রমণাত্মক আফগান অধিনায়ককে অবশেষে থামিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। এই বাঁহাতি স্পিনারের বলে বোল্ড হয়ে গেছেন তিনি। তাইজুলের বাঁক খাওয়া বল তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত করে স্টাম্পে। আউট হওয়ার আগে রশিদ ২২ বলে ৬ বাউন্ডারিতে করেন ২৪ রান।

দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে আবার আঘাত হানেন সাকিব। আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে পরপর দুই বলে উইকেট তুলে নেওয়া বাংলাদেশ অধিনায়ক শেষ বিকেলে তুলে নিয়েছেন কাইস আহমেদের উইকেট। এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন ১৪ রান করা আফগান ব্যাটসম্যানকে।

তৃতীয় দিনে সাকিবই বাংলাদেশের সেরা বোলার। ৫৩ রান খরচায় তার শিকার ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন তাইজুল ও নাঈম।

এর আগে তৃতীয় দিনের শুরুতে মোটে ৪ ‍ওভার ব্যাট করতে পেরেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২০৫ রানে অলআউট হয়ে স্বাগতিকরা আফগানিস্তান থেকে পিছিয়ে থাকে ১৩৭ রানে।

মোসাদ্দেক হোসেন অপরাজিত থাকলেও সঙ্গীর অভাবে কিছুই করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ৪৮ ‍রানে। তৃতীয় দিনে মাত্র ১১ রান যোগ করতে শেষ ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।

আগের দিনের ৮ উইকেটে ১৯৪ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনের সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের চাওয়া ছিল, অপরাজিত থাকা মোসাদ্দেক ও তাইজুল যেন আরও অনেকটা সময় থাকতে পারেন ক্রিজে। কিন্তু দিনের প্রথম ওভারেই ফিরে যেতে হয় তাইজুলকে।

দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে প্রতিরোধ গড়লেও তৃতীয় দিনের তৃতীয় বলে হার মানেন তাইজুল। মোহাম্মদ নবীর বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। যাওয়ার আগে ৫৮ বলে খেলেন ১৪ রানের ইনিংস।

তার বিদায়ের পর নাঈম হাসানের শুরুটা ভালো হলেও বেশিদূর যেতে পারেননি। ১২ বলে ৭ রান করে ফেরেন প্যাভিলিয়নে। তাকে ফিরিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেটের ঘর পূরণ করেন রশিদ খান। ৫৫ রানে আফগান অধিনায়ক নিয়েছেন ৫ উইকেট। মোহাম্মদ নবীর শিকার ৩ উইকেট।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০২১
Design and Developed by IT Craft in association with INTENT