হেফাজত ইসলামের বিরুদ্ধে ৭ বছরের পুরনো মামলা নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এতদিন এসব মামলা নিয়ে পুলিশের আগ্রহ না থাকলেও এখন দ্রুত তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দিতে চায় সংস্থাটি। সম্প্রতি সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরাও মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার তাগাদা দিয়েছেন।
রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় ২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার নেতাকর্মী তাণ্ডব চালায়। এসব ঘটনায় ঢাকাসহ ৭ জেলায় মোট ৮৩টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাগুলোতে তিন হাজার ৪১৬ জনের নামে এবং ৮৪ হাজার ৭৯৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছিল।
আসামিদের মধ্যে হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, নেজামে ইসলাম, খেলাফত মজলিশ, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের নাম আছে। এসব মামলার মধ্যে শুধু বাগেরহাটে দায়ের হওয়া মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। স্থবির অবস্থায় রয়েছে ৬২টি মামলা।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ৮৩টি মামলার মধ্যে ১৫টি মামলায় ২০১৪ সালে হেফাজতে ইসলাম, জামায়াত ও বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ১৫টি মামলার মধ্যে ঢাকার কলাবাগান থানায় দুটি, রমনায় একটি, শেরেবাংলা নগর থানায় একটি, বাগেরহাটে ছয়টি, নারায়ণগঞ্জে পাঁচটি দায়ের করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, রাজধানীতে করা ৫৩টি মামলার মধ্যে চারটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৯টি মামলার তদন্ত চলছে। এসব মামলায় প্রায় ৩০০ নেতার নামসহ অন্তত ৪০ হাজার লোককে আসামি করা হয়। মামলাগুলোর বেশিরভাগই তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, শুধু হেফাজতের মামলা নয়। যে কোনও মামলার তদন্তের গতি যেকোনও সময় বাড়তে পারে। আমরা হেফাজতের মামলার তদন্ত করছি। তদন্তের স্বার্থে আর কোনও মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম বলেন, আমাদের কাছে যে মামলাগুলো জমা আছে। সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে। এসব মামলার আসামিরা নতুন কোনও আন্দোলনে জড়িত কিনা সে বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
হেফাজতে ইসলামের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন বলেন, এখন এক শ্রেণির লোক সারকারকে প্রভাবিত করছে। তারা চাচ্ছেন, দেশের ওলামা একরামদের সঙ্গে সরকারে সংঘাত হোক। আমরা মনে করি, মুখোমুখি অবস্থানে নেওয়ার জন্য ওই গ্রুপটা কাজ করছে। এটার অংশ হিসেবেই পুরনো মামলাগুলো নতুন করে সামনে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
হেফাজত ইসলামের এই নেতা আরও বলেন, ২০১৩ সালে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, এখন যারা বিভিন্নভাবে ভাস্কর্যের বিষয়টিকে সামনে আনছে, তারাই মূলত এই তৃতীয় পক্ষ। আমরা মনে করি, এই গ্রুপের কিছু মানুষ সরকারের ভেতরেও আছেন। এখন তারা চেষ্টা করছেন, আমাদের সঙ্গে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করে ফায়দা হাসিল করতে। কিন্তু আমাদের ওলামা একরামদের সিদ্ধান্ত হলো আমরা কোনও সংঘাতে জড়াবো না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘হেফাজতের এই মামলাগুলো দীর্ঘদিন বিচারাধীন ছিল। মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে। এর জন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে হবে।’ তিনি জানান, এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া এবং এর জন্য বিশেষ কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এরমধ্যে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে দুজন মাদ্রাসার শিক্ষক ও দুজন মাদ্রাসার ছাত্র। পুলিশ বলছে, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওই দু’জন ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছেন।
নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা আমিনুল ইসলাম বুলবুল। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলার দু’টি আবেদনের শুনানির পর আদালত পিবিআইকে অভিযোগ তদন্ত করে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আমরা এখনও কাগজপত্র হাতে পাইনি। নির্দেশ পেলে তদন্ত কাজ শুরু করবো। তদন্তের স্বার্থে আইনগতভাবে যেভাবে আগানোর দরকার, সেভাবে আগাবো।
Leave a Reply