পবিত্র মাহে রমজানের মহিমা ও ঐতিহ্যকে প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে গতকাল শুরু হয়েছে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর রমজান উৎসব ‘নূরে রমজান’। সাইমুমের উক্ত আয়োজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে (টিএসসি) শুক্রবার বিকাল ৪টায় শুরু হয়েছে যা চলবে আজ রাত ১১টা পর্যন্ত।
রমজানের শুভ্রতা, পবিত্রতা ও মহিমা ফুটিয়ে তোলায় অনুষ্ঠানটি ঢাকাবাসীর প্রশংসায় ভাসছে। প্রথম দিন সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরা থেকে এসেছিলেন মোহাম্মাদ ইয়াসির নামের মধ্যবয়সি এক দর্শক। আমার দেশকে ইয়াসির বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এত সুন্দর একটা আয়োজন প্রশংসার দাবিদার। আমি সন্তানকে সঙ্গে এনেছি। এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শুভ্র আবেশ ছড়িয়ে আছে পুরো টিএসসি এলাকা। দেখে খুবই ভালো লাগছে। আমার সন্তান খুবই আনন্দ পেয়েছে।’
যাত্রাবাড়ী থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী ইসরাত জাহান বলেন, ‘মুগ্ধতা ছড়ানো এই আয়োজন। হামদ, নাত ও গজল শুনে হৃদয় শীতল হয়ে গেছে। এ ধরনের সুস্থ সাংস্কৃতিক আয়োজন সারা দেশে হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সংস্কৃতি বলতে অপসংস্কৃতি বুঝি। অথচ ইসলামের মহিমা তুলে ধরেও কত সুন্দর আয়োজন করা সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী। আমাদের দেশে সব আয়োজনের পেছনে আয়োজকদের চিন্তা থাকে কীভাবে অনুষ্ঠানটাকে বাণিজ্যিক করা যায়। কীভাবে লাভবান হওয়া যায়। ফলে সে সব অনুষ্ঠান থেকে দর্শকের পাওয়ার কিছু থাকে না। সাইমুমের এই আয়োজনে সে সবের বালাই নেই। আছে নির্লোভ, নির্মোহ ও আন্তরিক উপস্থাপনা।’
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান আয়োজন নিয়ে বলেন, ‘আমরা আট-দশজন বন্ধু এসেছি। এর আগে আমরা বিভিন্ন আয়োজনে গেছি মূলত হইচই করার জন্য, আনন্দ করার জন্য। কিন্তু এই প্রোগ্রামে এসে তন্ময় হয়ে গজল শুনেছি। গুরুগম্ভীর মনে তাদের সব আয়োজন ঘুরে ঘুরে দেখেছি। মনের ভেতর অদ্ভুত এক আবেশ ছড়িয়ে গেছে। সত্যিই এ ধরনের আয়োজনে না আসলে বোঝা যাবে না সংস্কৃতি কত রকমের হতে পারে।’
আনিসুর রহমানের বন্ধু রাসেল মাহমুদ বলেন, “শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধরা এসেছেন। সব বয়সের মানুষ নূরে রমজান আয়োজনের সব দিক উপভোগ করছেন। শিশু শিল্পীদের কণ্ঠে ‘এলো রে রমজান’ গানটা শোনার সময় চোখ ভিজে উঠেছে। এগুলোও আমাদের সংস্কৃতির অংশ, অথচ আমরা এসব দেখতে পারিনি এতদিন। আয়োজকদের অনেক ধন্যবাদ। শুধু রমজান নয়, ধর্মীয় উৎসবগুলো ঘিরে সাইমুমের এমন আয়োজন যেন হয় সেই প্রত্যাশা আমার।”
হাসনাত আব্দুল্লাহ নামের এক যুবক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর বর্ণাঢ্য আয়োজন ‘নূরে রমজান’। আচ্ছা এত উৎসবমুখর রমাদান আগে কখনো দেখেছেন? পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে রামাদানকে বরণ করার উৎসব চলমান। দেশ সেজেছে যেন নতুন সাজে। আসলে স্বৈরতান্ত্রিক একটা দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেলে, এর পজিটিভ ইম্প্যাক্ট ধর্মকর্মেও পড়ে। কারণ এই ঢাবিতেই ইফতার মাহফিলে, কোরআন শিক্ষার আসরে এবং গজল-কাওয়ালি সন্ধ্যায় পর্যন্ত হামলা করেছে আবু জাহেলের উত্তরসূরিরা। সেই ঢাবিতেই আজ উৎসবমুখর রমাদান পালিত হচ্ছে।’
এর আগে শুক্রবার অনুষ্ঠানটি ভিডিও বার্তায় উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, উপস্থিত ছিলেন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, আরো উপস্থিত ছিলেন সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ (সসাস)-এর নির্বাহী পরিচালক এইচ এম আবু মুসা, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর সাবেক পরিচালক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শরিফ বায়েজিদ মাহমুদ, বদিউর রহমান সোহেল, আব্দুল্লাহীল কাফী ও অন্য পরিচালকবৃন্দ, বিভিন্ন মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ববৃন্দ এবং সংস্কৃতিপ্রেমী দর্শক-শ্রোতা।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা বিভিন্ন স্টল ও কর্নার যেমনÑ কিডস কর্নার, ফটো বুথ, জুলাই বিপ্লবে সাইমুমের দেয়ালিকা, কোরআনের ঐতিহাসিক ঘটনাবলি, জেরুজালেম থেকে ঢাকা, জুলাই বিপ্লবের স্থিরচিত্র, পোশাকের স্টল, খাবারের স্টল, ক্যালিগ্রাফির স্টল ও অন্যান্য স্টল পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি ও বক্তারা সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা তথা ১৯৭৮ সাল থেকে বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর গুরুত্ব ও ভূমিকা তুলে ধরেন, সেই সঙ্গে রমজান যে মুসলিমদের জন্য ইবাদতের পাশাপাশি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ মাস সেই বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর বর্তমান পরিচালক শিল্পী জাহিদুল ইসলাম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আহসান হাবীব খান এবং শিল্পী দিদারুল ইসলাম। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রতিদিন ইফতারের পর হামদ-নাত ও গজল সন্ধ্যা থাকবে, যেখানে জাতীয় পর্যায়ের শিশু-কিশোর ও অন্য শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন।
Leave a Reply